ডিজিএফআই পরিচয়ে সৈয়দপুর প্লাজার ব্যবসায়ীদের আয়না ঘরের হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩-২-২০২৫ বিকাল ৫:২৬
ডিজিএফআই পরিচয়ে সৈয়দপুর প্লাজার ব্যবসায়ীদের আয়না ঘরের হুমকি
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও স্বৈরাচারী শাসনের প্রভাব সমাজের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। বিশেষত, সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটে ডিজিএফআই পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের আয়না ঘরের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
স্বৈরাচারের ছায়ায় ব্যবসায়ী সমাজ আতঙ্কে?
জানা গেছে, মাত্র চার বছর ডিজিএফআইতে চাকরি করা সাবেক কর্মকর্তা নূর ই এলাহী, যিনি বর্তমানে সৈয়দপুর প্লাজা এস আর ট্রেডিং-এর সিনিয়র ম্যানেজার, তিনি অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং লাঙ্গলকোট থানার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
শামসুল হক ভূঁইয়া, যিনি সৈয়দপুর প্লাজার একক মালিকানা দাবি করছেন, প্রকৃতপক্ষে সুকৌশলে যৌথ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের ঠকিয়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তার অন্যতম সহযোগী নূর ই এলাহী এবং প্রকল্প পরিচালক গুলজার আহমেদ মিলে ব্যবসায়ীদের ওপর "আয়না ঘরের ভয়ভীতি" প্রদর্শন করে এবং তাদের দোকানের বৈধ রেজিস্ট্রেশন পেতে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করছে।
মালিকানা নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ
প্রাপ্ত নথিপত্র অনুসারে, সৈয়দপুর প্লাজা এবং এস আর ট্রেডিং-এর মূল মালিকানা ছিল চারজনের মধ্যে বিভক্ত:
১) মো. হোসেন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, সৈয়দপুর প্লাজা ও এস আর ট্রেডিং
২) শামসুল হক ভূঁইয়া, এমডি, সৈয়দপুর প্লাজা ও এস আর ট্রেডিং
৩) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডাইরেক্টর, ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন
৪) বিলকিস বানু, ডাইরেক্টর, ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন
ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন যৌথ মূলধনী কোম্পানি (Joint Stock Company) নিবন্ধিত হলেও, এস আর ট্রেডিং কোনো নিবন্ধিত কোম্পানি নয়। তারপরও শামসুল হক ভূঁইয়া এবং মো. হোসেন ভূঁইয়া যৌথ স্বাক্ষরে শত শত দোকান মাত্র ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বিক্রি করেছেন, যা অবৈধ ও প্রতারণার শামিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি শামসুল হক ভূঁইয়া একক মালিক হন, তাহলে কেন মো. হোসেন ভূঁইয়ার যৌথ স্বাক্ষর প্রয়োজন হলো? এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রমাণ হয় যে একক মালিকানা দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক।
আয়না ঘরের হুমকি ও ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক
দোকান মালিকদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তালবাহানা করায় যখন ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানায়, তখন নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদ মিলে তাদের ডিজিএফআই পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে "আয়না ঘরের হুমকি" দিতে থাকে।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল— "আয়না ঘর দেখেছো কখনো?"। এতে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়, ফলে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে একটি সালিশি বৈঠকে নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদ নিজেদের দোষ স্বীকার করে দোকান মালিকদের কাছে ক্ষমা চান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রতিবাদ করলেই মামলা! মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয়
এই অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমিতি ও দোকান মালিক সমিতির নেতারা প্রতিবাদ করলে, নূর ই এলাহী কৌশলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আদালতে প্রমাণিত হয় যে মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও হুমকি
নূর ই এলাহী, শামসুল হক ভূঁইয়া ও গুলজার আহমেদের দুর্নীতি ও প্রতারণা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে, তারা সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে শুরু করেন। তারা পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং "হলুদ সাংবাদিকতা" বলে আখ্যা দেয়। এতে করে সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রশ্ন রয়ে যায়!
১) একজন সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা কীভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের "আয়না ঘরের" মতো ভয়ভীতি দেখানোর সাহস পায়?
২) কেন প্রশাসন এই জালিয়াতি, প্রতারণা ও হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
৩) একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থাপনায় কীভাবে প্রতারণামূলক মালিকানা দাবি ও চাঁদাবাজি চলতে পারে?
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান
সৈয়দপুর প্লাজার ব্যবসায়ীরা, দোকান মালিকরা এবং সাংবাদিকরা প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে জোর দাবি জানানো হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩-২-২০২৫ বিকাল ৫:২৬
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও স্বৈরাচারী শাসনের প্রভাব সমাজের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। বিশেষত, সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটে ডিজিএফআই পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের আয়না ঘরের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
স্বৈরাচারের ছায়ায় ব্যবসায়ী সমাজ আতঙ্কে?
জানা গেছে, মাত্র চার বছর ডিজিএফআইতে চাকরি করা সাবেক কর্মকর্তা নূর ই এলাহী, যিনি বর্তমানে সৈয়দপুর প্লাজা এস আর ট্রেডিং-এর সিনিয়র ম্যানেজার, তিনি অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং লাঙ্গলকোট থানার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
শামসুল হক ভূঁইয়া, যিনি সৈয়দপুর প্লাজার একক মালিকানা দাবি করছেন, প্রকৃতপক্ষে সুকৌশলে যৌথ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের ঠকিয়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তার অন্যতম সহযোগী নূর ই এলাহী এবং প্রকল্প পরিচালক গুলজার আহমেদ মিলে ব্যবসায়ীদের ওপর "আয়না ঘরের ভয়ভীতি" প্রদর্শন করে এবং তাদের দোকানের বৈধ রেজিস্ট্রেশন পেতে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করছে।
মালিকানা নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ
প্রাপ্ত নথিপত্র অনুসারে, সৈয়দপুর প্লাজা এবং এস আর ট্রেডিং-এর মূল মালিকানা ছিল চারজনের মধ্যে বিভক্ত:
১) মো. হোসেন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, সৈয়দপুর প্লাজা ও এস আর ট্রেডিং
২) শামসুল হক ভূঁইয়া, এমডি, সৈয়দপুর প্লাজা ও এস আর ট্রেডিং
৩) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডাইরেক্টর, ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন
৪) বিলকিস বানু, ডাইরেক্টর, ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন
ভূঁইয়া হক এন্ড কনস্ট্রাকশন যৌথ মূলধনী কোম্পানি (Joint Stock Company) নিবন্ধিত হলেও, এস আর ট্রেডিং কোনো নিবন্ধিত কোম্পানি নয়। তারপরও শামসুল হক ভূঁইয়া এবং মো. হোসেন ভূঁইয়া যৌথ স্বাক্ষরে শত শত দোকান মাত্র ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বিক্রি করেছেন, যা অবৈধ ও প্রতারণার শামিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি শামসুল হক ভূঁইয়া একক মালিক হন, তাহলে কেন মো. হোসেন ভূঁইয়ার যৌথ স্বাক্ষর প্রয়োজন হলো? এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রমাণ হয় যে একক মালিকানা দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক।
আয়না ঘরের হুমকি ও ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক
দোকান মালিকদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তালবাহানা করায় যখন ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানায়, তখন নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদ মিলে তাদের ডিজিএফআই পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে "আয়না ঘরের হুমকি" দিতে থাকে।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল— "আয়না ঘর দেখেছো কখনো?"। এতে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়, ফলে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে একটি সালিশি বৈঠকে নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদ নিজেদের দোষ স্বীকার করে দোকান মালিকদের কাছে ক্ষমা চান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে নূর ই এলাহী ও গুলজার আহমেদকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রতিবাদ করলেই মামলা! মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয়
এই অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমিতি ও দোকান মালিক সমিতির নেতারা প্রতিবাদ করলে, নূর ই এলাহী কৌশলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আদালতে প্রমাণিত হয় যে মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও হুমকি
নূর ই এলাহী, শামসুল হক ভূঁইয়া ও গুলজার আহমেদের দুর্নীতি ও প্রতারণা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে, তারা সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে শুরু করেন। তারা পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং "হলুদ সাংবাদিকতা" বলে আখ্যা দেয়। এতে করে সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রশ্ন রয়ে যায়!
১) একজন সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা কীভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের "আয়না ঘরের" মতো ভয়ভীতি দেখানোর সাহস পায়?
২) কেন প্রশাসন এই জালিয়াতি, প্রতারণা ও হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
৩) একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থাপনায় কীভাবে প্রতারণামূলক মালিকানা দাবি ও চাঁদাবাজি চলতে পারে?
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান
সৈয়দপুর প্লাজার ব্যবসায়ীরা, দোকান মালিকরা এবং সাংবাদিকরা প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে জোর দাবি জানানো হয়েছে।