সমবায়ের বাতিঘর খ্যাত 'কালব’ দুর্নীতির কড়াল গ্রাসে নিমজ্জিত : নেপথ্যে আরিফ ও জোনাস

#
news image

প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সমবায়ের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব) ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দুর্নীতির চক্রে পড়ে বেহাল হচ্ছে এর কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে তার সমবায়ী কার্যক্রম। বিগত সরকারের সময়ে বহু রাজনৈতিক নেতা স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধাও ভোগ করেছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১১টি কো- অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কাল্ব)। পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের এবং গোষ্ঠীকেও এর সদস্যপদ দেওয়া হয়। কালব বিগত সাড়ে চার দশকে সদস্যদের দারিদ্র বিমোচনে রিসোর্ট, এগ্রো প্রজেক্টসহ নানা উৎপাদনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রয়েছে এর বিশালাকার নিজস্ব কার্যালয়ও। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের থাবার কবলে পড়ে আজ প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আর এর মূলহোতা হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া এবং সাবেক চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী বলে জানা গেছে। এ চক্রের অন্যান্যরা হলেন ভাইস-চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা, পরিচালক মোঃ আরিফ হাসান, পরিচালক মোঃ আঃ মন্নান লোটাস, পরিচালক নোয়েল চার্লস গমেজ, পরিচালক মোঃ হেলালউদ্দিন ও আশীষ কুমার দাশ।

এ চক্রের বিরুদ্ধে কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের উন্নয়নের অর্থ আত্মসাৎ, জমি ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রতি ভঙ্গ, রিসোর্টের রুমভাড়া নিয়ে বিল পরিশোধ না করা, কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার এবং এর বারের লাইসেন্স বাবদ কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সাতজন সদস্য অত্যন্ত দূরভিসন্ধিমূলকভাবে চেয়ারম্যান মি. আগস্টিন পিউরীফিকেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও কাল্ব-এর মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে শ্লথ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। সূত্র আরো জানায় যে, মূলত প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহারে ব্যর্থ হতে দেখে তারা পদত্যাগ করেছেন।

এছাড়া কাল্ব-এর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস কনসোর্টিয়াম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের মেয়াদকালীন সময়ে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ না পাওয়ায় এবং উপরোক্ত দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সমবায় সমিতি আইন-২০০১ (সংশোধিত-২০০২ ও ২০১৩)-এর ৪৮ ধারার পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে একই আইনের ৪৯ ধারায় তদন্ত হলে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা থেকে এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসা, কাল্ব কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত তদন্ত কার্যক্রম উদঘাটিত, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের বিষয়গুলো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মূলত উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা কমিটির ৭ (সাত) জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা এ প্রতিবেদকে জানান।

অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া ও জোনাস ঢাকী গং ও সহচররা নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে কালবের সফট্ওয়ার সংক্রান্ত চুক্তিতে চরম অনিয়ম, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম, কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, বিউটিফিকেশনের কাজ, পার্কিং, দেওয়াল ও ওয়াকওয়ে তৈরী, ওয়াশিংপ্ল্যান্ট, ইনডোর গেইমজোন, বেড, ম্যাট্রেস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ওয়াশিং মেশিনসহ নানা ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এমনকি আরিফ মিয়া কালব রিসোর্টে একটি সাজানো গোছানো রুম দিনের পর দিন নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। যেখানে অবৈধ কর্মকাণ্ডও সংগঠিত হতো।

পদত্যাগী সেক্রেটারী আরিফ মিয়া নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকিকে নানাভাবে প্ররোচিত ও সন্তুষ্ট রাখতেন। আরিফ মিয়া চুমকিকে নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াও রিসোর্ট থেকে বিনামূল্যে প্রায় ১,৭৫,০০০/= টাকা ৫০০ প্যাকেট খাবার সরবরাহ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আরিফ মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে কাল্বের মাঠ ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন বলা জানায় গেছে। মেহের আফরোজ চুমকি এবং তার দলবল নিয়ে কাল্ব রিসোর্টকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন এখানে দলীয় সভা হতো। সভা বাবদ যত খরচ হতো তার কোনটিরই এ পর্যন্ত বিলই পরিশোধ করেনি।

জানা যায় যে, এসব বিষয় নিয়ে যখনই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মাঝে তদন্তের দাবি ওঠে তখনই তারা পদত্যাগ করেন। যাতে কমিটির কার্যক্রম থমকে যায় এবং তদন্ত করতে না পারে।

বিগত বোর্ডের সময় আরিফ মিয়া ও তার মদদপুষ্ট জোনাস ঢাকী নানা অপকর্ম ও দুর্নীতি করে থাকে। তার কয়েকটির স্বরূপ নিম্নরূপ: কালব রিসোর্টের নামে বার লাইসেন্স বাবদ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। প্রকৃতপক্ষে বার লাইসেন্স বাবদ সরকারি খরচ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

রিসোর্ট উন্নয়নের জন্য জাহানারা ট্রেডার্সের নামে ভুয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ প্রদান, যেখানে ৩ কোটি টাকার কাজ সম্পাদিত হয়, বাকি টাকার ভুয়া বিল বানিয়ে আত্মসাৎ। রিসোর্টের নতুন ক্রয়কৃত জমি বালি বরাট করার জন্য ৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে ১-২ কোটি টাকার বালু ভরাট করে বাকি টাকা আত্মসাৎ।

 

রিসোর্টের সামনে এটিএম বুথ তৈরী বাবদ ২৬ লক্ষ টাকা অনুমোদন করিয়ে প্রকৃতপক্ষে ২-৩ লক্ষ টাকার খরচ হয়। বাকি টাকা আত্মসাৎ। রিসোর্টের উন্নয়নে কিড জোন তৈরী করার জন্য ৩ কোটি টাকা অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অকেজো ও পুরনো খেলনা ক্রয়।

রিসোর্টের জন্য কোটি টাকার উপরে লন্ড্রি মেশিন ক্রয় দেখানো হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের লন্ড্রি মেশিন ১০ লক্ষ টাকার কমেই পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে সেই লন্ড্রি মেশিনটি ডুপ্লিকেট। যা ইতোমত্যে বার বার বিকল হয়ে পড়ছে।

রিসোর্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় করার জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হলেও বাস্তবিকপক্ষে তালিকায় থাকা কোন সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়নি।

বিগত ২০২২ সালের বোর্ড অব ডিরেক্টর নির্বাচনে আরিফ মিয়া এবং জোনাস ঢাকী ভোট ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন ক্রেডিট ইউয়নের প্রতিনিধিদের রিসোর্টে রাখে, সে বাবদ খরচ হয় ১৮ লক্ষ টাকার অধিক। অদ্যাবধি সে বিল পরিশোধ করা হয়নি।

আরিফ মিয়া বিভিন্ন সময় রিসের্টে তার বন্ধু বান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম করার জন্য নিয়ে আসত এবং এ বাবদ যাবতীয় খরচ তিনি পরিশোধ করবেন বললেও পবের্তীতে তা দিতেন না। এ বাবদ প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে।

কালব রিসোর্টে সর্বশেষ ৭ বিঘা জমি ক্রয় করে যার প্রকৃত মূল্য বিঘা প্রতি ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা কিন্তু জমির মূল্য দেখানো হয়েছে বিঘা প্রতি ২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। ৭ বিঘা জমিতে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আরিফ মিয়া রিসোর্টে যেকোনো প্রোগ্রামে ৩য় পক্ষের মাধ্যমে আয়োজন দেখিয়ে ১০% প্রাপ্য বিল থেকে কমিশন বাণিজ্য করতো। আরিফ মিয়া

রিসোর্টের লেকে বিনা অনুমতিতে মাছ চাষ করে সেই মাছের খাবার রিসোট থেকে সরবরাহ করাত। রিসোর্টের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী নিজের বন্ধুর মাধ্যমে সরবরাহ করত। যার ফলে প্রতিমাসে খাবার সামগ্রী ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবের একটি সূত্র জানায়, আরিফ মিয়া সমবায় কর্মকর্তাদের নানা ভয়ভীতি ও আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে জোর করে কালবের কর্যক্রমকে ব্যাহত করার পায়তারা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার অপপ্রয়াসে তিনি তথাকথিত যুবলীগ কর্মীদের দিয়ে রিসোর্টে হামলা চালান এবং কাল্ ব কর্মীদের মারধর করে রিসোর্ট দখল করার পায়তারা করেন। এ প্রতিবেদক আরিফ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮-৮-২০২৪ বিকাল ৫:৩৯

news image

প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সমবায়ের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব) ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দুর্নীতির চক্রে পড়ে বেহাল হচ্ছে এর কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে তার সমবায়ী কার্যক্রম। বিগত সরকারের সময়ে বহু রাজনৈতিক নেতা স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধাও ভোগ করেছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১১টি কো- অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কাল্ব)। পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের এবং গোষ্ঠীকেও এর সদস্যপদ দেওয়া হয়। কালব বিগত সাড়ে চার দশকে সদস্যদের দারিদ্র বিমোচনে রিসোর্ট, এগ্রো প্রজেক্টসহ নানা উৎপাদনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রয়েছে এর বিশালাকার নিজস্ব কার্যালয়ও। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের থাবার কবলে পড়ে আজ প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আর এর মূলহোতা হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া এবং সাবেক চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী বলে জানা গেছে। এ চক্রের অন্যান্যরা হলেন ভাইস-চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা, পরিচালক মোঃ আরিফ হাসান, পরিচালক মোঃ আঃ মন্নান লোটাস, পরিচালক নোয়েল চার্লস গমেজ, পরিচালক মোঃ হেলালউদ্দিন ও আশীষ কুমার দাশ।

এ চক্রের বিরুদ্ধে কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের উন্নয়নের অর্থ আত্মসাৎ, জমি ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রতি ভঙ্গ, রিসোর্টের রুমভাড়া নিয়ে বিল পরিশোধ না করা, কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার এবং এর বারের লাইসেন্স বাবদ কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সাতজন সদস্য অত্যন্ত দূরভিসন্ধিমূলকভাবে চেয়ারম্যান মি. আগস্টিন পিউরীফিকেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও কাল্ব-এর মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে শ্লথ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। সূত্র আরো জানায় যে, মূলত প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহারে ব্যর্থ হতে দেখে তারা পদত্যাগ করেছেন।

এছাড়া কাল্ব-এর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস কনসোর্টিয়াম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের মেয়াদকালীন সময়ে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ না পাওয়ায় এবং উপরোক্ত দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সমবায় সমিতি আইন-২০০১ (সংশোধিত-২০০২ ও ২০১৩)-এর ৪৮ ধারার পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে একই আইনের ৪৯ ধারায় তদন্ত হলে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা থেকে এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসা, কাল্ব কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত তদন্ত কার্যক্রম উদঘাটিত, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের বিষয়গুলো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মূলত উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা কমিটির ৭ (সাত) জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা এ প্রতিবেদকে জানান।

অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া ও জোনাস ঢাকী গং ও সহচররা নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে কালবের সফট্ওয়ার সংক্রান্ত চুক্তিতে চরম অনিয়ম, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম, কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, বিউটিফিকেশনের কাজ, পার্কিং, দেওয়াল ও ওয়াকওয়ে তৈরী, ওয়াশিংপ্ল্যান্ট, ইনডোর গেইমজোন, বেড, ম্যাট্রেস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ওয়াশিং মেশিনসহ নানা ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এমনকি আরিফ মিয়া কালব রিসোর্টে একটি সাজানো গোছানো রুম দিনের পর দিন নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। যেখানে অবৈধ কর্মকাণ্ডও সংগঠিত হতো।

পদত্যাগী সেক্রেটারী আরিফ মিয়া নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকিকে নানাভাবে প্ররোচিত ও সন্তুষ্ট রাখতেন। আরিফ মিয়া চুমকিকে নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াও রিসোর্ট থেকে বিনামূল্যে প্রায় ১,৭৫,০০০/= টাকা ৫০০ প্যাকেট খাবার সরবরাহ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আরিফ মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে কাল্বের মাঠ ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন বলা জানায় গেছে। মেহের আফরোজ চুমকি এবং তার দলবল নিয়ে কাল্ব রিসোর্টকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন এখানে দলীয় সভা হতো। সভা বাবদ যত খরচ হতো তার কোনটিরই এ পর্যন্ত বিলই পরিশোধ করেনি।

জানা যায় যে, এসব বিষয় নিয়ে যখনই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মাঝে তদন্তের দাবি ওঠে তখনই তারা পদত্যাগ করেন। যাতে কমিটির কার্যক্রম থমকে যায় এবং তদন্ত করতে না পারে।

বিগত বোর্ডের সময় আরিফ মিয়া ও তার মদদপুষ্ট জোনাস ঢাকী নানা অপকর্ম ও দুর্নীতি করে থাকে। তার কয়েকটির স্বরূপ নিম্নরূপ: কালব রিসোর্টের নামে বার লাইসেন্স বাবদ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। প্রকৃতপক্ষে বার লাইসেন্স বাবদ সরকারি খরচ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

রিসোর্ট উন্নয়নের জন্য জাহানারা ট্রেডার্সের নামে ভুয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ প্রদান, যেখানে ৩ কোটি টাকার কাজ সম্পাদিত হয়, বাকি টাকার ভুয়া বিল বানিয়ে আত্মসাৎ। রিসোর্টের নতুন ক্রয়কৃত জমি বালি বরাট করার জন্য ৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে ১-২ কোটি টাকার বালু ভরাট করে বাকি টাকা আত্মসাৎ।

 

রিসোর্টের সামনে এটিএম বুথ তৈরী বাবদ ২৬ লক্ষ টাকা অনুমোদন করিয়ে প্রকৃতপক্ষে ২-৩ লক্ষ টাকার খরচ হয়। বাকি টাকা আত্মসাৎ। রিসোর্টের উন্নয়নে কিড জোন তৈরী করার জন্য ৩ কোটি টাকা অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অকেজো ও পুরনো খেলনা ক্রয়।

রিসোর্টের জন্য কোটি টাকার উপরে লন্ড্রি মেশিন ক্রয় দেখানো হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের লন্ড্রি মেশিন ১০ লক্ষ টাকার কমেই পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে সেই লন্ড্রি মেশিনটি ডুপ্লিকেট। যা ইতোমত্যে বার বার বিকল হয়ে পড়ছে।

রিসোর্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় করার জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হলেও বাস্তবিকপক্ষে তালিকায় থাকা কোন সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়নি।

বিগত ২০২২ সালের বোর্ড অব ডিরেক্টর নির্বাচনে আরিফ মিয়া এবং জোনাস ঢাকী ভোট ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন ক্রেডিট ইউয়নের প্রতিনিধিদের রিসোর্টে রাখে, সে বাবদ খরচ হয় ১৮ লক্ষ টাকার অধিক। অদ্যাবধি সে বিল পরিশোধ করা হয়নি।

আরিফ মিয়া বিভিন্ন সময় রিসের্টে তার বন্ধু বান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম করার জন্য নিয়ে আসত এবং এ বাবদ যাবতীয় খরচ তিনি পরিশোধ করবেন বললেও পবের্তীতে তা দিতেন না। এ বাবদ প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে।

কালব রিসোর্টে সর্বশেষ ৭ বিঘা জমি ক্রয় করে যার প্রকৃত মূল্য বিঘা প্রতি ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা কিন্তু জমির মূল্য দেখানো হয়েছে বিঘা প্রতি ২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। ৭ বিঘা জমিতে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আরিফ মিয়া রিসোর্টে যেকোনো প্রোগ্রামে ৩য় পক্ষের মাধ্যমে আয়োজন দেখিয়ে ১০% প্রাপ্য বিল থেকে কমিশন বাণিজ্য করতো। আরিফ মিয়া

রিসোর্টের লেকে বিনা অনুমতিতে মাছ চাষ করে সেই মাছের খাবার রিসোট থেকে সরবরাহ করাত। রিসোর্টের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী নিজের বন্ধুর মাধ্যমে সরবরাহ করত। যার ফলে প্রতিমাসে খাবার সামগ্রী ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবের একটি সূত্র জানায়, আরিফ মিয়া সমবায় কর্মকর্তাদের নানা ভয়ভীতি ও আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে জোর করে কালবের কর্যক্রমকে ব্যাহত করার পায়তারা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার অপপ্রয়াসে তিনি তথাকথিত যুবলীগ কর্মীদের দিয়ে রিসোর্টে হামলা চালান এবং কাল্ ব কর্মীদের মারধর করে রিসোর্ট দখল করার পায়তারা করেন। এ প্রতিবেদক আরিফ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।